মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬

অর্থ উপার্জনের হারাম ও নিষিদ্ধ উপায় সমূহ



অর্থ উপার্জনের হারাম নিষিদ্ধ উপায় সমূহ

ব্যক্তি সমাজ তথা মানুষের জন্যে যা কিছু ক্ষতিকর, অকল্যাণকর, তা সবই হারাম, নিষিদ্ধ এবং অবৈধ। ইসলামের নীতি অর্থনৈতিক বিষয়াদিসহ মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইসলামের অর্থনীতি সমন্বিতভাবে ইতিবাচক নীতিবাচক ইসলামের এই নীতিবাদিতা শরিয়ার বিধান এবং শাশ্বত আদর্শিক নীতিবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সে হিসেবে ইসলামে নিুোক্ত উপায় পন্থা প্রক্রিয়ায় আয় উপার্জন হারাম, নিষিদ্ধ অবৈধ


.    রিবা (সুদ) : সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :
وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَوا

অর্থ: আল্লাহ হালাল করেছেন ব্যবসা বাণিজ্য এবং হারাম করেছেন রিবা (সূদ) (সূরা আল বাকারা : আয়াত ২৭৫)

.    রিশওয়াত : অর্থাৎ ঘুষ উৎকোচের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ।
.    গরর : অর্থাৎ প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ, তা যে প্রকারেরই হোক।
.    ডাকাতি, লুন্ঠন, ছিনতাই অপহরণের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ।
.    দখল, জবর দখলের উপার্জন নিষিদ্ধ।
.    নিজের খুশিমতো দাম বা বিনিময় দিয়ে স্বত্তাধিকারীর অনিচ্ছা সত্তেও নিয়ে নেয়া নিষিদ্ধ। 
এই কয়টি বিষয় সম্পর্কে কুরআন মজিদে বলা হয়েছে :
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ

অর্থ: তোমরা নিজেদের মধ্যে অবৈধ পন্থায় একে অপরের অর্থ সম্পদ খেয়োনা এবং সেগুলো শাসকদের সামনেও এমন কোনো উদ্দেশ্যে উত্থাপন করোনা, যাতে করে তোমরা জেনে বুঝে পরের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পাও। (সূরা আল বাকারা : আয়াত ১৮৮)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ

অর্থ: হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের অর্থ সম্পদ বাতিল অন্যায় অবৈধ উপায়ে খেয়োনা। তবে পারস্পারিক ইচ্ছা সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসা করলে ভিন্ন কথা। (সূরা আন্ নিসা : আয়াত ১৮৮) প্রসঙ্গে আরো দ্রষ্টব্য সূরা আল মায়িদা : আয়াত ৩৩।
.    আমানতের খেয়ানত আত্মস্যাতের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য (আল কুরআন : ২৮৩; : ১৬১
.    জুয়া, বাজি এবং এমন সব উপায় প্রক্রিয়া অবলম্বন করে উপার্জন করা, যার মাধ্যমে ঘটনাচক্রে একজনের অর্থসম্পদ আরেকজনের কাছে চলে যায়। এগুলো হারজিতের ধ্বংসকর খেলা। এতে এক পক্ষ কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই আরেক পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তার অর্থ লুটে নেয়। প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য সূরা আল মায়িদা : আয়াত ৯০।
.    হারাম বস্তুর উৎপাদন, ক্রয় বিক্রয় ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : যেমন, . মদ মাদকদ্রব্য, . মৃত প্রাণী, . শুয়োর, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির ব্যবসা। দ্রষ্টব্য সূরা আল মায়িদা : আয়াত ,৯০ এবং হাদিস দ্রষ্টব্য।
১০.    লটারি, ভাগ্য গণনা জ্যোতিষ ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য সূরা আল মায়িদা : আয়াত ৯০।
১১.    অশ্লীলতা অপসংস্কৃতি প্রচার প্রসারকারী কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জন: দ্রষ্টব্য আল কুরআন, সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ১৯।
১২.    ইহ্তিকার : ইহ্তিকারের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। ইহ্তিকার হলো দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মওজুদ করে রাখা। বাজারে এর বিভিন্ন ধরণের নাম রয়েছে। রসূল সা. ধরণের কারবার নিষিদ্ধ করেছেন। তাছাড়া এটা সূরা নিসার ২৯ আয়াতে বর্ণিত বাতিল পন্থায় উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।
১৩.    রাষ্ট্র ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে অর্থোপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য সূরা : আয়াত ১৮৮।
১৪.    চুরির মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য আল কুরআন সূরা : আয়াত ৩৮।
১৫.    দেহ ব্যবসা বেশ্যাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। দ্রষ্টব্য আল কুরআন, সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ,৩৩।
১৬.    মাপে ওজনে কমবেশি করার মাধমে উপার্জন নিষিদ্ধ। অর্থাৎ মেপে বা ওজন করে নেয়ার সময় বেশি নেয়া এবং দেয়ার সময় কম দেয়া। কুরআন মাজিদে ধরনের লোকদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দ্রষ্টব্য: সূরা ৮৩ মুতাফ্ফিফিন : আয়াত--১০।
১৭.    চোরাই মাল ক্রয় বিক্রয় এবং চোরালানী নিষিদ্ধ।
১৮.    অর্থ সম্পদ জমি জমা অনুৎপাদনশীল ফেলে রাখা নিষিদ্ধ।
১৯.    আসলের সাথে নকল ভেজাল মিশিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ।
২০.    আসলের স্যাম্পল দেখিয়ে নকল সরবরাহ করা নিষিদ্ধ।
২১.    আসলের মোড়কে ভেজাল নকল মাল বিক্রি করা নিষিদ্ধ।
২২.    ফটকাবাজারি মুনাফাখোরী নিষিদ্ধ।
হাদিস থেকে এগুলোর নিষেধাজ্ঞা জানা যায়।
২৩.    এতিমের অর্থ সম্পদ সহায় সম্পত্তি ভোগ দখল করা নিষিদ্ধ : আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘যারা অন্যায় ভাবে এতিমদের অর্থ সম্পদ সহায় সম্পত্তি ভোগ দখল করে, তারা মূলত আগুন দিয়ে নিজেদের উদর ভর্তি করে। অচিরেই তাদের পোড়ানো হবে জ্বলন্ত আগুনে।’ (সূরা আন্নিসা : আয়াত ১০)
২৪.     বোনদের বা অন্য কারো উত্তরাধিকার বন্টন করে না দিয়ে নিজের সম্পদের সাথে একাকার করে রেখে ভোগ করা : যারা উওরাধিকার বন্টন করেন না, সূরা আন নিসার ১৪ আয়াতে তাদের অপমানজনক অনন্ত আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
২৫.    ধনীদের যাকাত খাওয়া করা নিষিদ্ধ : ধনীদের যাকাত প্রদান করা ফরয। যাকাত পাওয়া অভাবীদের অধিকার। যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ থেকে যাকাত বের করে দেয়না, সে নিজ অর্থ সম্পদের সাথে অভাবীদের যাকাত বা অর্থ সম্পদ একাকার করে ভোগ করে। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা অনুযায়ী সম্পদ দ্বারা তার জন্যে আগুনের বেড়ি তৈরি হচ্ছে। (দ্রষ্টব্য সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৮০)
২৬.    দোকানি বা কারো নিকট থেকে কিছু ক্রয় করে দাম না দেয়া। ফলে ক্রয় করা বস্তু তার অবৈধ উপার্জন- যা তার জন্যে সম্পূর্ণ হারাম। এটা যুলুমের উপার্জন। অপরের অধিকার হরণ। (সূরা আন্নিসা : আয়াত ২৯)
২৭.    অন্যায্য বন্টন: উত্তরাধিকার বন্টন হোক, যৌথ কারবারের লাভালাভ বন্টন হোক, যৌথ ক্রয়ের মাল-সম্পদ বন্টন হোক, অথবা অন্য যে কোনো ধরণের বন্টনের ক্ষেত্রে নিজের ভাগে বেশি নেয়া, বেছে বেছে ভালোটা নেয়া, কিংবা নিজে সুবিধাজনকটা নিয়ে নেয়া অবৈধ। এটা যুলুমের মাধ্যমে উপার্জন। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। (দ্রষ্টব্য : সূরা নিসা, আয়াত ১০ ৩০)
২৮.    ধার, করজ, ঋণ বা লোন নিয়ে পরিশোধ না করা। মানুষ সাধারণত . উন্নয়ন কাজের জন্যে, . ব্যবসায়ে বিনিয়োগের জন্যে, কিংবা . অভাবের তাড়নায় মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্যে ঋণ করে থাকে।
ঋণ গ্রহণ করা হয়ে থাকে সাধারণত সরকারি তহবিল, সরকারি ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক, সংস্থা এবং সামর্থবান ব্যক্তিদের নিকট থেকে।
কোনো চরম অভাবী বা দেউলিয়াকে ব্যক্তি তার ঋণ মাফ করে দিতে পারে। কিন্তু যারা ঋণ গ্রহণ করে চরম অভাবী বা দেওলিয়া না হয়েও ঋণ পরিশোধ করেনা, কিংবা সময়মতো করেনা, ইসলামের দৃষ্টিতে তারা চরম শাস্তি ভোগ করবে। কারণ তারা অন্যায়ভাবে অন্যদের অর্থসম্পদ গ্রাস করেছে।
২৯.    হারানো বা পড়ে থাকা অর্থ সামগ্রী নিয়ে নেয়া; ধরণের কিছু পাওয়া গেলে তা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ উক্ত অর্থ সামগ্রীর স্বত্বাধিকারীকে খুঁজে বের করার জন্যে প্রচার বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করবে। শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া না গেলে এই অর্থ সামগ্রী জনকল্যাণ মূলক তহবিলে জমা হবে।
৩০.    সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্রাস আতংক সৃষ্টি করে এবং দাপট দেখিয়ে অর্থ আদায় করা নিষিদ্ধ। যেমন : চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাট ইত্যাদি। কুরআন এবং হাদিসে ধরণের কাজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য আল কুরআন, সূরা : আয়াত ১৮৮; সূরা : আয়াত ২৯)
৩১.    যাদুমন্ত্র বা যাদু টোনার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। এটা মানুষের জন্যে ধ্বংসকর বিধায় কুরআন হাদিসে এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৩২.    মূর্তি, প্রতিকৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ, উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রসূলুল্লাহ সা. এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
৩৩.     ছাড়াও ব্যক্তি, মানবতা ঈমান আকিদার জন্যে ক্ষতিকর সবই নিষিদ্ধ

Source: ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ব্যয়ের নীতিমালা আবদুস শহীদ নাসিম, © author প্রকাশক: বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটি 

http://www.islam.net.bd/content/view/204/27/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন