শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

সুদের বিরুদ্ধে কোরআনের আয়াত ও হাদীস


আসুন সুদ থেকে বিরত থাকি

সুদ একটি হারাম এবং চরম ঘৃণিত কাজ। যা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।আসুন সুদ ভিত্তিক ব্যাংক-বীমা, সমিতি ও লেনদেন থেকে বিরত থাকি।

সুদের বিরুদ্ধে কোরআনের অবস্থান/আয়াতঃ

) যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে৷ তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃব্যবসা তো সুদেরই মতো অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম  কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে , সে জাহান্নামের অধিবাসী সেখানে সে থাকবে চিরকাল (আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৫)

) আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত বিকশিত করেন আর আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না (আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৬)

) হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও , যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো(আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৮)

) কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা  এখনো তাওবা করে নাও ( এবং সুদ ছেড়ে দাও ) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না (আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৯)

) হে ঈমানদারগণ ! চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে (আলে ইমরান,আয়াতঃ ১৩০)

) সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য, আমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল৷ আর তাদের মধ্য থেকে যারা কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি৷ (আন নেসা,আয়াতঃ ১৬১)

) যে সূদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না   আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে৷(আর রূম,আয়াতঃ ৩৯)

সুদের বিরুদ্ধে হাদীসঃ

) হযরত মূসা ইবনে ইসমাঈল (রঃ)......সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌছলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে সে যতবার বেরিয়ে আসতে চায়,ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি রক্তের নদীতে দেখছেন, সে হল সূদখোর। (বুখারীঃঅধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ঃ ১৯৫৫)

) হযরত  আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বিরত থাক। জিজ্ঞেস করা হল,হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), সে গুলো কি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, যাদু টোনা করা, আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন এমন প্রাণীকে অকারণে হত্যা করা, এতীমের মাল আত্মসাত করা,সুদ খাওয়া,জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং সতী সাধ্বী নিষ্কলুষ মুমিন মহিলার উপর ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। (মুসলিম, কিতাবুল ইমানঃ১৭০)

) হযরত  আহমদ ইবনে ইউনুস(রঃ).....আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) সূদখোর, সূদ দাতা,এর সাক্ষী এবং সুদের হিসাব/দলীল লেখক—সকল কে অভিশাপ দিয়েছেন। আর তিনি এদের সবাই কে সমান অপরাধী বলেছেন।(আবু দাউদ,অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ঃ ৩৩০০)

) হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ (রঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সুদের সত্তরটি স্তর রয়েছে। সবচেয়ে নিম্নটি হল-নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা (ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ব্যবসাঃসুদঃ ২২৭৪)

) হযরত  আবু হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমি এমন এক গোত্রের পাশ দিয়ে গমন করি,যাদের পেট ছিল ঘরের মত বড়, যার মধ্যে বিভিন্ন রকম সাপ বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হল সুদখোর।(ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ব্যবসাঃসুদঃ ২২৭৩)

) হযরত  আব্বাস ইবনে জাফর(রঃ).....ইবনে মাসউদ (রাঃ) সুত্রে রাসূল (সাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে বেশী সুদ খাবে, পরিনামে তার সম্পদ কম হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ব্যবসাঃসুদঃ ২২৭৯)

) হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালাহ(রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমান সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ছত্রিশ বার ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুনাহের কাজ। (মুসনাদে আহমদঃ১০৩৩)


২৪টি মন্তব্য:

  1. মাশাআল্লাহ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদীস জানতে পারলাম। আল্লাহপাক আপনাদেরকে জাযা দিন।

    উত্তরমুছুন
  2. সুদগ্রহিতার ব্যাপারে তো কোন আয়াত কিংবা হাদিসের রেফারেন্স পেলাম না! বিপদে পড়ে কারো কাছ থেকে সুদে টাকা নিলে ,সেও কি চীর জাহান্নামী হবে?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হযরত আহমদ ইবনে ইউনুস(রঃ).....আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) সূদখোর, সূদ দাতা,এর সাক্ষী এবং সুদের হিসাব/দলীল লেখক—সকল কে অভিশাপ দিয়েছেন। আর তিনি এদের সবাই কে সমান অপরাধী বলেছেন।(আবু দাউদ,অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ঃ ৩৩০০

      মুছুন
    2. ভাই সুদ দেয়া বন্দ করে দিলে,নেয়ার প্রশ্ন আসে না

      মুছুন
    3. সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, সাক্ষ্য দাতা সবাই সমান অপরাধি

      মুছুন
  3. আল্লাহ এই যঘন্য পাপ থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন।আমিন।

    উত্তরমুছুন
  4. সমগ্র সুদ সম্পর্কেও তথ্য একত্রে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  5. সুদ শব্দের অর্থ কি এই আইনের থান সময় বিস্তারিত আলোচনা করবেন কি? তাফহিমুল কোরআনের 2/275 আয়াতে সুদ শব্দের যে ব্যখ্যা দিয়েছেন তার ব্যপারে আপনাদের মত কি?

    উত্তরমুছুন
  6. ভালো লাগলো। আল্লাহ আপনার নেক হায়াত দান করুক। আমিন।

    উত্তরমুছুন
  7. যদি কেউ বিপদে পরে কারও কাছ থেকে টাকা ধার নেয় আর সেটা দিতে দেরি হয়, তখন যার কাছ থেকে টাকা নিছে সে যদি শুদ ছাড়া টাকা নিবে না/ বাধ্য করে তাহলে ঋণ গ্রহিতাও কি সমান অপরাধী হবে?

    উত্তরমুছুন
  8. দলিল গুলো আরবিতে হলে ভালো হতো।

    উত্তরমুছুন
  9. মাশাআল্লাহ,জাযাকাল্লাহু খায়ের

    উত্তরমুছুন
  10. ইংশাআল্লাহ জীবনে একটা টাকাও সুদ খাব না ।

    উত্তরমুছুন
  11. আমি এই লেখা দ্বারা আমার হৃদয়ে আল্লাহর ভয় এসেছে

    উত্তরমুছুন
  12. রাসুল(সাঃ)এর বিদায় হজ্ব ভাষন টা
    আরবি দিন অনেক কিছু জানা যাবে।

    উত্তরমুছুন
  13. নিচেই কোরআনের আয়াত দিলে খুব ভালো হতো।

    উত্তরমুছুন
  14. তোমরা জীবন বাঁচাতে হলে শুয়োরের মাংস খাও কিন্তু সুদ খেয়ো না।

    উত্তরমুছুন
  15. পিতা মাতা সুদের টাকা খেলে সন্ততানের উপর কি প্রভাব পড়বে? রেফারেন্সসহ উত্তর দিলে উপকৃত হবো।

    উত্তরমুছুন
  16. রুম সুরায় আয়াত নাম্বার সঠিক পাই নাই।

    উত্তরমুছুন